খুব যত্নশীল একটা সম্পর্কে যখন অযত্নের আধিপত্য বিস্তার হওয়া শুরু করে, তখন একজন আরেকজনকে দোষারোপ করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। তৃপ্তির কথপোকথনে একটু একটু করে লেপ্টে যায় তিক্ততা। তৈরি হয়- বিষাদ, ক্রোধ।
কিছু কিছু গল্পের মত সুন্দর সম্পর্কের অপমৃত্যু হয়ে যায় যত্ন যখন অযত্নের আফসোস শুরু করে দেয়। অনেক আহ্ণাদের মানুষটির কাছে গোপন আবদারে থাকা- নির্লিপ্ত প্রেম যখন অসহায় হয়ে পড়ে... মানুষ তখন পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।
এরপর হঠাৎ করে সমস্ত অধিকার জুঁড়ে থাকা নির্দিষ্ট কাউকে হারানোর ভয় চেপে ধরে। তখন পাঁজর ঝাপটে দাপট দেখিয়ে দেয়- সন্দেহ, সংশয় আর অপমান। একটু একটু না বলা প্রেম, অনুনয়, আর অভিমানের গায়ে সময় সেঁটে দেয় ❝প্রকাশ নিষেধ❞ ফেস্টুন।
এরপর আর ফেরা হয়না, বলা হয়না... বলা যায়না... ফেরা যায়না সমস্ত প্রার্থনারত ভালোবাসা নিয়ে। দুঃখ চেপে আপন মানুষ হারাইলে আর পাওয়া যায়না।
সময়ের অযত্ন অবহেলা, অসময়ের উপচে পড়া ভালোবাসাকে মূল্যহীন করে দেয়।
রিপোস্ট
আমাকে যে ছেড়ে গেছে—আমার যাবতীয় চাওয়া পাওয়া... তীব্র ভালোবাসাকে উপেক্ষা করেই গেছে। নির্দিষ্ট পরিমানে ভালোবাসার কোন নিয়ম থাকলে আমি বুঝতে পারতাম—ঠিক কতটা অযোগ্যতা ছিলো। তামাম দুনিয়ার কোন মানুষইতো নিখুঁত প্রেমিক নয়; আমি আঁট আনার মানুষ, ষোলআনা যত্ন মেখে রেখে দিতে পারিনি।
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার খুঁচরো কারণ জানতে পেরেছি ইনবক্সে জমে থাকা বাংলা অভিধানের কলিজা পুড়িয়ে দেওয়া কিছু শব্দের হামলায়। মানুষ দোষগুণ মেনে নিয়ে ভালোবেসে একটা সময় রাস্তারলোকের মত মুখ ফিরিয়ে নেয়; কথা পেচিয়ে আহত করার চেষ্টা করে মমতায় ভাটা পড়লে।
আমি কখনো তাকে অভিযোগে অভিযুক্ত করিনি; যারে ভাঙার সুযোগ দিয়েছি সে ভেঙে যাবেই... যারে অধিকার তুলে দিয়েছি সে প্রত্যাক্ষান করবেই; যার কাছে ব্যক্তিত্ব হারিয়েছি সে ব্যক্তিত্ব টেনে দু'চারটি কথা শোনাবেই।
তবে ছেড়ে যাবে বলে মানুষকে পাষাণের অভিনয় করতে হবে কেনো? মধ্যরাতের নিশ্চুপ আলাপনের ভীড়েওতো কত শক্ত-পোক্ত সম্পর্কের মৃত্যুদন্ড হয়। আমিতো প্রেমিক আঁট-আনার মানুষ। অসামাজিক কিংবা অ-যত্নশীল বলেও যেতো পারতো... অ-প্রেমিক বানিয়ে চলে গেছে।
আহত মনে দামামা লাগিয়ে নির্মমভাবে চলে যাওয়ার একটাই কারণ আবিষ্কার করেছি পরিণত হয়ে... মোহ আর মুগ্ধতা হারিয়ে গেলে সম্পর্কে পচন ধরে। শরীরের পচন ঠেকানোর মলম আছে, মন পচনের মলম পুরো পৃথিবী তন্নতন্ন করে খুঁজেও মিলবে না।
চলে যাওয়ার জন্য আসা যাত্রীকে ভালোবাসায় বেঁধে রাখার সাধ্য কারও নেই। আমিতো প্রেমিক আঁট-আনার মানুষ।
কাছের মানুষদের অবহেলা অবজ্ঞা সহ্য করতে না পেরে কত মানুষরে চোক্ষের সামনে বদলায়া যাইতে দেখলাম, মইরা যাইতাম দেখলাম কত জনরে হিসাব নাই।
রমিহ চাচার মাইয়াডা পড়াশোনায় কাম কাইজে খুবই গুনী আছিলো। সমস্যা হইলো মাইয়াডার গায়ের রঙ আছিলো ময়লা। ময়লা গায়ের রঙের কারণে বিবাহ হয় না। মাইয়াডা চাকরি করনের সিদ্ধান্ত নিলো। রহিম চাচারে এই কথা কওনের পর রহিম চাচা দরজার খিল দিয়া মাইয়াডারে পাষাণের মত পিডাইলো। পিডাইতে পিডাইতে কইলো, এমনিতেই বিয়া দিতে পারি না গায়ের রঙ কালা দেইখা, এখন আবার বাহিরে চাকরি কইরা চরিত্রও কালা বানাইতে চাস? আমারে না খাইয়া তো মরবি না, মরলেও শান্তি পাইতাম। কী যে হইলো মাইয়াডার, মাইয়াডা সত্যি সত্যি বিষ খাইয়া মইরা গেল। মাইয়াডার মরার অনেকদিন পর এক বৃষ্টির রাইতে আমি রহিম চাচারে কানতে দেখলাম। ক্ষ্যাপা বৃষ্টির রাইতে মইধ্যে রহিম চাচা মাইয়ার কবর জড়াইয়া ধরে কানতে কানতে নাম ধরে মাইয়ারে ডাকলো, মা রে মা, ও মা, তুই ভয় পাইস না, আমি আছি তো...
কাছের মানুষের কাছে অবহেলা অবজ্ঞা পাইয়া কত মানুষরে বদলাইয়া যাইতে দেখলাম, মইরা যাইতে দেখলাম কতজনরে হিসাব নাই।
আমাগো বাড়ির সোহাইল মিয়ার বউডা বড় ভালা মানুষ আছিলো। সোহাইল আছিল আস্ত একটা হারামজাদা। রাজনীতি করতো। দুনিয়ার বেবাক কাম কাইজের লাইগা তার টাইম ছিল, দুনিয়ার বেবাক মানুষের পিছনের লাইগা খরচ করনের লাইগা টাকাপয়সা ছিল। শুধু বউডার লাইগা তার সময় আছিলো না, বউডার পিছনে খরচ করনের সময় আইলে সে হইয়া যাইতো দুনিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ। উনিশ-বিশ হইলেই কইতো, তোর বাপের বাড়ির থেইকা লইয়া আয়, ভালো যদি না লাগে তাইলে চইলা যা। যাইতো না কোনোদিন। নেড়িকুত্তার লাহান পইড়া থাকতো তার সংসারে। একদিন সোহেল ভাই হাতেনাতে পরকীয়ায় ধরা খাইলো। সোহেল প্রতিবারের মত কইলো, আমার যা খুশি আমি করুম, তোর ভালো না লাগলে তুই চইলা যা। চইলা গেল সে, আর কোনদিও ফিরল না। সোহাইল ভাইরে তারপর শতবার দেখছিলাম ভাবিরে আনতে গেছিলো, হাতে পায়ে ধরছিলো, কিন্তু আনতে পারে নাই। ভাবি সোহাইল ভাইরে ডিভোর্স দিয়া দিলো। ডিভোর্সের এক বছর পর আবার বিয়া কইরা সংসারী হইয়া গেল সে। শুধু সোহাইল ভাই দিনরাইত এক কইরা কাইন্দা গেল, তবুও তার শূন্য ঘর আর পূর্ণ হইলো না। শুনছি, পরের সংসারে ভাবির একটা ফুটফুটে পোলাও হইসে। ওই পোলার নাম রাখছে, স্বাধীন।
কাছের মানুষের কাছে অবহেলা অবজ্ঞা পাইয়া কত মানুষরে বদলাইয়া যাইতে দেখলাম, মইরা যাইতে দেখলাম কতজনরে হিসাব নাই।
আমার বন্ধু সাগর পাঁচটা বছর এক মাইয়ার জন্য দিন রাইত এক কইরা দিসে। কি করে নাই সাগর ওই মাইয়ার লাইগা? আমার মনে আছে, প্রেমিকা ওরে একদিন রাইতে দেখা করনের কথা কইল, সাগর তহন ঢাকায় হোটেলে চাকরি করে, সকাল নয়টায় তার ডিউটি। রাতের বাস ধইরা প্রেমিকার স্কুলে গিয়া হাজির হইলো রাত এগারোটায়। শীত তহন চারদিকে। সকাল সাতটা পর্যন্ত সাগর বইয়া রইলো প্রেমিকার স্কুলের সামনে তার লগে দেখা করনের লাইগা ওই শীতের রাইতে। অনেকদিন সম্পর্কের পর সাগর জানলো, ওই মাইয়ার কাছে সাগর অত গুরুত্বপূর্ণ না। সাগরে আবেগ, প্রেম আর সরলতার সুযোগ নিয়া মজা নেয় মাইয়াডা। আমি ভাবতাম এই মাইয়ারে সাগর ভুলতে পারব না কোনদিনও, আমারে অবাক কইরা দিয়া ওই মাইয়াডারে সাগর ভুইলা গেল। অন্য আরেকটা মাইয়ারে বিয়া কইরা সংসারি হইয়া গেলো। শুধু ওই মাইয়াডার বিয়া হইলো না আইজও।
কাছের মানুষের অবহেলা অবজ্ঞা মানুষরে পাথর কইরা তোলে, কঠিন কইরা তোলে, কইরা তোলে অসীম শক্তিশালী। ওই পাথরের হৃদয় আর কোন আকুতি মিনতি গলাইতে পারে না, ওই দেয়ালরে আর কোন আঘাতেই ভাঙন যায় না। ওই অসীম শক্তির উপরে ভর কইরা মানুষ ভয়ংকরভাবে বদলাইয়া যায়।
আমিও বদলাইয়া যামু। আর আমার বদলাইয়া যাওয়া দেইখা তুমিও দেখবা ভেউভেউ কইরা কানতে কানতে আগের আমিরে আমার কাছে চাইবা; কিন্তু পাইবা না। সেদিন আমি তোমারে শুনাইমু কবিতার ওই দুই'টা লাইন
নতুন আমিতে অবাক তুমি
আগের আমি তো মূল্যহীন
যেই আমি টাকে খুঁজছো আজ
তাকে হারিয়ে ফেলেছো বহুদিন,
বহুদিন,
বহুদিন....
.
আবহাওয়ার কথা না লিখলে চিঠি পরিপূর্ণ হয় না। সারাদিন ভ্যাপসা গরম পড়েছিল খুব, সন্ধ্যার পর থেকে আকাশ মেঘলা। রাত ঘন হলে বৃষ্টি নামবে হয়তো। আয়োজন করে বৃষ্টি দেখো আগের মত এখনও? আচ্ছা কেমন আছো বলো? হুমায়ূন কী পড়ো রাত জেগে? শুনেছি এবার বর্ষাকাল দীর্ঘ হবে। তোমার আমার দীর্ঘদিন দেখা না হবার মত দীর্ঘ। গত বর্ষায় চমৎকার একটা কাণ্ড ঘটে গেছে জানো? সেবার কলকাতা থেকে ফিরার সময় যে গাছটা দিয়েছিলে সে গাছটাতে খুব ফুল ফুটেছে। প্রতিটি ডালে ডালে কামিনী ফুলের ছড়াছড়ি। রাত হলেই ফুলের গন্ধে সারাটা বাড়ি ঘোর ভূতূড়ে হয়ে ওঠে। বর্ষায় নদীতে এত জোয়ার আর হাওয়া ছিল যে জানালা খুলে দিলে নদীর জলের টলটে শব্দ শোনা যেত, হওয়ার সাথে ঘরে ঢুকে যেত কামিনী ফুলের ঘ্রাণ। ভেবেছিলাম একবার হাওয়ার কাছে বলেকয়ে তোমার কাছে পৌছে দিব কিছু ফুলের সৌরভ।
তুমি তো ভালো করেই জানো আমি চিঠি লিখতে জানি না। জানিনা বলেই ভাবতে হয় আর কি কি লিখবো চিঠিতে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কথাও লেখা যায়, লেখা যায় ক্ষুধার কথা। প্যা*লেস্টাইন এর দিকে তাকালে আমার শুধু মনে হয়, পৃথিবীর জাতীয় সঙ্গীত ক্ষুধা। ওখানকার শিশুরা ঘাসের স্যুপ খায়। আমরা যে গনতন্ত্র হারিয়েছি এটা প্রায় নিশ্চিত। বলা যেতে পারে দূর্নিতি যুক্ত উন্নয়নরত ঝুরঝুরে আনাম ব্রিজের মত আমাদের অর্থনীতি ঝুরঝুরে হয়ে ধসে পড়বে হঠাৎ। হতে পারে মানুষ আবারও বলতে পারে রাজপথের মিছিলে, ভাত দে হারামজাদা। এদিকে গেল বছর গোটা একটা শহর পুড়ে গেল আগুনে। মানুষও পুড়েছে ভীষণ। বহুদিন তোমাকে দেখতে না পেরে আমার হৃদয়ও যে পুড়ছে সে কথা না হয় নাই লিখলাম।
এমন কেনো হলো শ্রুতি ? সব এমন উল্টেপাল্টে গেলো কেন? আচ্ছা সত্যি করে বলো তো আমায় কী তুমি ভালোবাসতে না? জানার বড় ইচ্ছে হয়।
তোমার মনে আছে? তোমার সঙ্গে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিন তুমি সবুজ রঙের একটা শাড়ি পরেছিলে। চারদিকে মাগরেবের আযানের সুর ভাসছিল। এত মধুর শুনালো সে আযানের সুর ওই মূহুর্তে। আযান শেষ হওয়ার পর তোমার দিকে তাকিয়ে আমার প্রথম কথা ছিলো “সবুজ শাড়িতে তোমায় দেখতে সুনীলের কবিতার মত লাগে”। আমার কথা শুনে লজ্জায় তোমার গাল দু'টো এত লাল হলো, আমার দিকে তাকাতেই পারছিলে না।
আমাদের গেছে যে-দিন একেবারেই কী গেছে শ্রুতি? ধর্ম তো মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়, তাহলে আমাদের এমন আলাদা করে ছাড়লো কেন? তোমার স্মৃতি কাঁটাতারের মত বিঁধে আছে বুকের গোপনে। মাঝেমধ্যে পুরোনো স্বভাব পেয়ে বসে আমাকে খুব করে, তখন তোমার ঘন চুলে আমার প্রতিটি আঙুল ডুবিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমি তো আমার কাছে নেই! আমার এখানে পাশের ফ্লাটে একটা মেয়ে থাকে। দেখতে তোমার মতো। ছাদে প্রায়শই বিকালে ফুল গাছে জল দিতে আসে। মেয়েটাকে দেখলে খুব মায়া লাগে। শুনেছি মেয়েটা করুণ ক্যান্স্যারে ভুগছে।
মায়া বড্ড খারাপ জিনিস শ্রুতি; মায়া সমুদ্রের মতো। মানুষ ওখানে টুপ করে ডুবে যায়। আর ফিরতে পারে না। আমিও পারছি না কিছুতেই।
কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। আজকের বৃহস্পতিবার রাতের আসমানেও সেরকম অপূর্ব জোছনা হয়েছে। আমার সারা ঘর নরম আলোয় ভাসছে। গৌতম বুদ্ধের মতো গৃহত্যাগী হতে ইচ্ছে করলেও হতে পারছি না। আমার তো ঘরই নেই। যেই ঘর আছে সেটাকে নরক মনে হয়। কথা আর অজস্র গল্প নিয়ে সারাদিন পর ঘরে ফিরে দেখি ওইসব গল্প, কথা বলার কোথাও একটা মানুষ নেই। আমি তো তোমার ভেতর নিজের একখানা ঘর বানিয়ে রেখেছিলাম সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ফিরবো বলে। সে ঘর বার্তাহীন ঝড় এসে ভেঙে নিয়ে গেছে। আমি আর নতুন করে ঘর বানাতে পারছি না শ্রুতি। আমি আমার কাছে ফিরতে পারছি না।
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। ছাড়া ছাড়া অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি। শরীর অথবা মনে অসুখবিসুখ লেগেই আছে। ঘুম ভাঙলে চারপাশের সবকিছু অচেনা লাগে। জলের তৃষ্ণায় গলা শুঁকিয়ে যায়। একা একা ঘর থেকে বেরিয়ে নদীর পাশে গিয়ে বসে থাকি। জোছনার আলোয় ছোট ছোট মাছ ধরার ডিঙি নৌকা দেখা যায়। জীবনানন্দ দাশের কবিতার ওই দুইটি লাইন মনে পড়ে, “ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’লো তার সাধ”। আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে করে আজকাল শ্রুতি।
আজকের মতো এমনই কোন এক জোছনাময় বৃহস্পতিবার রাত্তিরে তোমাকে দেখার গাঢ় তৃষ্ণা নিয়ে আমি যদি সত্যি সত্যি মরে যাই; আমার নামে তুমি আকাশে ওড়াই দিও একশো একটা ফানুস।
ইতি,
আরিফ হুসাইন
আমি চেয়েছিলাম তুমি হও হুমায়ূন আহমেদের কোনো এক উপন্যাসের সহজ সরল নায়িকার মতো প্রাণবন্ত। কোন কোন ঘুম না আসা রাত্তিরে তুমি ওপাশ থেকে ফোন করে গান ধরো, যদি মন কাঁদে তুমি ফিরে এসো, ফিরে এসো এক বর্ষায়।
ফাইভস্টার রেস্তোরার দামি ম্যানুর কফির স্বাদ না খুঁজে মাঝেমধ্যে ওই শ্যাঁতশ্যাঁতে হোটেলের সিঙ্গারর গাল ভাঙার আবদার করো। খাওয়া শেষে খুব শক্ত করে হাত চেপে ধরে রিকশায় চড়ে শহর দেখতে দেখতে হয়ে ওঠো চমৎকার প্রেমিকা।
বৃষ্টি হলে শাড়ি চুড়ি পরে চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে সাজুগুজু করো। চিঠিতে লিখে রাখো বৃষ্টি নামার আনন্দের সংবাদ, চিঠির খামে ভরে রাখো কয়েকফোঁটা বৃষ্টি।
জন্মদিন এলে ওসব চিঠি কুরিয়ার করে পাঠাও সঙ্গে পাঠাও গুনে গুনে বেশ কয়েকটি কদমফুল।
অথচ, অথচ তুমি নিজেকে জড়ালে ওয়েস্টার্ন পোশাকে। আমার প্রাণবন্ত স্নিগ্ধ প্রেমিকা না হয়ে বুকের অন্দরের গোপন ফিতা দেখিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়ে উঠলে নষ্টালজিক এক নারী। নাপিত থেকে মুচি তোমার বুকের সাইজ মেপে তোমাকে প্রশংসায় ভাসায়, ডুবায়, চুবায়।
আমি খুঁজি প্রেম, তুমি যৌনতা। আমি চাই একটু তোমার কাঁধে মাথা রাখতে, তুমি চাও কামনার আগুনে জ্বলেপুড়ে আঙ্গার হতে। আমার এই সব চাওয়াকে তুমি খেইত্যা বলে উপাধি দাও। তুমি মেনে নাও পৃথিবীর যাবতীয় অশ্লীলতা, অথচ আমাকে বলো লম্পট।
আমি বোধহয় সেইসব খেইত্যা মানুষদের দলে ভিঁড়েছি যাদের এখনও কবিতা পড়লে হৃদয় শূন্য হয়ে আসে, জোছনা দেখলে হতে চায় গৃহত্যাগী, বৃষ্টি দেখলে বিড়াল ছানার মতো প্রিয়তমার বুকে ঢুকে বসে থাকতে চায় চুপচাপ।
আমি বোধহয় সেই-সব খেইত্যা প্রেমিকদের দলের মানুষ যারা শুধু প্রেমিকার প্রেমটুকুই চিনেছে, প্রেমিকার শরীর ছোঁয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
তুমি হয়তো জানো না, শরীর যদি আমায় টানতো তবে আমি পৃথিবীর এক'শো তিরানব্বইটি দেশের নারীর নগ্ন শরীরের দিকে ছুটতাম, তোমাকে কেন্দ্র করে ঘুরতাম না।
লেখা: আরিফ হুসাইন
তোমার প্রেমে পড়ার পর আমি হয়ে উঠেছিলাম শুদ্ধতম কবি। মস্তিষ্কের শেষ শিরা হতেও তোমার জন্য হৃদয় পুড়িয়ে লিখেছিলাম নষ্টালজিক সব কবিতা, গান, চিঠি। ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতেও ছিল দারুণ পাগলামি। মায়া নিয়ে, ছাঁয়া নিয়ে সে প্রেম লাউ লতার মতো মনের করিডোর মাড়িয়ে, সিঁড়ি জানলা ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছিল আমার ছাঁদনাতলার ছাদে বড্ড আদরে। চোখের ভেতর নয়তারা ফুলের মতো ফুটে ছিল অকৃত্রিম দারুণ স্বপ্ন ; একদিন আমরা আমাদের হবো।
আবেগ ছিলো, প্রেম ছিলো, যত্ন ছিল, জয় করার তীব্র চেষ্টাও ছিলো। শুধু ছিলো না ভাগ্যের উপর বিদাতার আশির্বাদ। নিয়তির খেলার কাছে হার মেনে গিয়েছে সে প্রেম। হঠাৎ থেমে গিয়েছিলাম আমরা কোথাও একজন মাঝ পথে। একজন শুধু দাঁড়িয়ে রইলাম ট্রেন শূন্য একটা প্লাটফর্মে, আর অন্যজন নতুন গন্তব্যের ট্রেনে ধরে চলে গিয়েছি বহুদূর। হায়!
বিশ্বাস করো; তারপর থেকে আমি আর কখনো কারোর জন্য কবিতা লিখতে পারিনি। রং তুলির হাতে পায়ে ধরেও আঁকতে পারিনি আর কোনো নতুন মুখের ছবি। একদিন যে হৃদয় মাঝে পাহাড় সমেত বিশ্বাসে ছিল সবুজ, সেখানে বাসা বাঁধলো অবিশ্বাসের করুন ক্যান্সার। মাতৃগর্ভে মৃতু্বরণ করা অনাগত সন্তানের মত আমার আবেগ মরে গেল। আমি কখনো কোন হাতের নরম আঙুলে রাখতে পারিনি আমার আঙুল। পিরিতের উপরে এত অরুচি আসলো যে স্বপ্ন ভাঙার ভয়ে নিজের পাশ ঘেষে বসতে দেইনি কাউকে। একটা অদৃশ্য বৃত্তে আটকা পড়েছিলাম আমি, ওই বৃত্তের ভেতর পা রাখার সাহস কারোর নেই।
গভীর প্রেমে মানুষ একবারই পড়ে। গভীর প্রেম নিয়ে একজনের জন্যই কবিতা গান চিঠি লেখে। ছেড়ে গেলে ওই একজনের জন্যই মানুষ জনমভর দুঃখ করে গোপনে অথবা প্রকাশ্যে। পরের বার যে প্রেম আসে তার কাছে মানুষ কেবলই সামান্য আশ্রয় খোঁজে, সর্বচ্ছ দিয়ে আকঁড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করে, এরচেয়ে কিছুই না।
প্রেমে আমি একবারই পড়েছি। তুমি চলে যাবার পর নতুন করে দ্বিতীয় আর কোন প্রেমের বৃষ্টি আমাকে ভিঁজাতে পারেনি। অনেকটা জীবনানন্দের কবিতার বিখ্যাত সেই দু'টি লাইনের মতো “এই পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।
লেখা: আরিফ হুসাইন
সবশেষে যে তোমারে পাইলো–সে যেনো তোমারে কিন্ন্যা দেয় বাড়িতে ফেরিওয়ালা আসলে শখের কানের দুল। সে যেনো বুঝতে না দেয় ভালো থাকা আর ভালোবাসার মাঝে থাকার পার্থক্য।
সে যেনো ফুল ভালোবাসে, সে যেনো তোমারে সামলায় ঠাণ্ডা মেজাজে, যেমন তুমুল বাতাসে কিশোর সামলায় আসমানে থাকা পাগলা ঘুড়ির নাটাই, অথবা কৃষক ধান কাটার সময় যেমন সামলায় শাহাদাত আঙুল।
সে যেনো হয় বই। বাংলা বই, লাল মলাট। তুমি যেনো তারে পড়তে পারো সহজে। মুখস্থ কইরা নিবার পারো দ্রুত, সে যেনো তোমার কাছে শুনতে চায় তোমার সবচেয়ে দুঃখের গল্পটা।
অনেকেই তো তোমারে পায় নাই–
ইরাকের বদশাহ, মন্ত্রীর চরিত্রহীন পোলা, মেম্বারের নেশাখোর চাওয়াল, স্কুলের জুনিয়র, কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের ছেলেটা, ভার্সিটির বড় ভাই, অথবা বাসার সামনে গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা হতভাগা আমি।
সবাইরে হারাইয়া যে তোমারে সবশেষে পাইলো
সে যেনো তোমারে পাইয়া খুশি হয়,যেমন খুশি হয় কাঙ্গাল জেলে, শূন্য জালে হঠাৎ আটকাইয়া গেলে একঝাঁক ইলিশ।
|| কাঙাল প্রেমিক ||[ হাসান রোবায়েত থেকে অনুপ্রানিত ]
লেখা: আরিফ হুসাইন
সবশেষে যে তোমারে পাইলো
সে যেনো ফুল ভালোবাসে,
সে যেনো তোমারে সামলায় ঠাণ্ডা মেজাজে।
কাঙাল প্রেমিক • আরিফ হুসাইন
ভিডিও : Abir Hossen Efaz
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
সবশেষে যে তোমারে পাইলো, সে যেনো তোমারে কিইন্না দেয় বাড়িতে ফেরিওয়ালা আসলে শখের কানের দুল। সে যেনো বুঝতে না দেয় ভালো থাকা আর ভালোবাসার মাঝে পার্থক্য।
সবশেষে যে তোমারে পাইলো, সে যেনো ফুল ভালোবাসে। সে যেনো তোমারে সামলায় ঠান্ডা মেজাজে। তুমুল বাতাসে কিশোর যেমন সামলায় আসমানে থাকা পাগলা ঘুড়ির নাটাই অথবা কৃষক ধান কাঁটার সময় যেমন সামলাইয়া রাখে শাহাদাত আঙুল। সে যেন তোমারে ঠান্ডা মাথায় সামলাইয়া রাখে।
সবশেষে যে তোমারে পাইলো, সে যেনো বই হয়। বাংলা বই। লাল মলাট। তুমি যেনো তারে পড়তে পারো সহজেই, মুখস্থ কইরে নিবার পারো অতি দ্রুত। সে যেনো তোমার কাছে শুনতে চায় তোমার সবচেয়ে দুঃখের গল্পটা।
অনেকেইতো তোমারে পায় নাই, যেমন ইরাকের বাদশা, মন্ত্রীর চরিত্রহীন পোলা, মেম্বারের নেশাখোর পোলা, স্কুলের জুনিয়র, কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছেলেটা, ভার্সিটির বড় ভাই অথবা বাসার সামনে গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা হতভাগা এই আমি।
সবারে হারাইয়া যে তোমারে সবশেষে পাইলো, সে যেনো তোমারে পাইয়া খুশি হয়। যেমন খুশি হয় কাঙ্গাল জেলে। শুন্য জালে আটকাইয়া গেলে হঠাৎ একঝাঁক তরতাজা ইলিশ।
সবশেষে যে তোমারে পাইলো সে যেনো তোমারে কিইন্না দেয়, বাড়িতে ফেরিওয়ালা আসলে শখের কানের দুল। সে যেনো কখনোই কিছুতেই বুঝতে না দেয় ভালো থাকা আর ভালোবাসার মাঝে পার্থক্য। তোমার তো ফুল পছন্দ! সে যেনো ফুল ভালোবাসে। ভ্যানগাড়ী ভর্তি ফুল নিয়ে তোমারে সারপ্রাইজ দেয়। হুটহাট রেগে যাও তুমি, সে যেনো তোমারে সামলায় ঠান্ডা মাথায়। সে যেনো তোমারে সামলায় ঠান্ডা মাথায়।
কেউ যদি কিছু কবিতা ভয়েস করে পাঠাইয়া দিতো...