অলিন্দে কেউ নেই!
আহত দৃষ্টি ফিরে আসে বার বার।
রোজ বিকেল, খোলা বাতায়ন,
গ্রীলের গারদে বাড়ানো হাত।
চোখে চোখ, বাতাসে আলাপন,
টোল গালে হেসে ওঠা ঈষৎ দৃষ্টিপাত।
কিছুই নেই,
সবই আজ স্মৃতির দখলে।
অথচ অভ্যাসগুলো রয়ে গেছে আজও।
এখনো দিনশেষে বিকেল নামলে
আমি আনমনা হয়ে যাই,
স্মৃতির পায়ে পায়ে হাঁটি।
অভ্যাসের দৃষ্টিতে চোখ রাখি তোমার অলিন্দে।
জানি, ওদিকে তাকালেই
ফের আহুত হবে দৃষ্টি!
কিন্তু স্মৃতির আকুতি যে
দৃষ্টির আহুতি অপেক্ষা কঠিন!
প্রিয় অনিন্দিতা!
জানো, মাঝে মাঝে দৃষ্টিভ্রম হয়।
দেখি তুমি ফিরে এসেছো।
বাতাসে হাসির শব্দ ভাসে
অলিন্দে খেলা করে তোমার খোলা চুল।
চলতে চলতেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে যাই।
তাকিয়ে দেখি; খোলা বাতায়ন,
আর অলিন্দে কেউ নেই!
কবিতা : অলিন্দে কেউ নেই
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
যে মানুষটা আমার, তাকে অন্যকারো জন্য
মন খারাপ করতে দেখলে– খারাপ লাগে।
অন্যকারো বারণ শুনে কোনোকিছু থেকে
বিরত থাকতে দেখলে– খারাপ লাগে।
হ্যাঁ, মাঝে মাঝে হয়তো
আমিই তার মন খারাপের কারণ হই।
মাঝে মাঝে হয়তো আমিই
তার হাজার কাজের বারণ হই।
তবুও তার মন খারাপ হলে
আমি ছাড়া অন্যকেউ তার মন ভালোর
কারণ হলে– আমার খারাপ লাগে।
যদিও তার মন খারাপ থাকলে
শরৎ আকাশে নামে বর্ষার ঘনঘটা,
তার হাসিতে ম্লান বিষাদ দেখলে
চাঁদের জ্যোৎস্নায় নেমে আসে ভাটা।
তবুও দিনশেষে মনে হয়;
আমিই যেন হই তার মন খারাপের কারণ,
আমি ছাড়া অন্যকিছুতে মন ভালো হওয়া বারণ।
বই : আমায় তুমি ফিরিয়ে নিও ফুরিয়ে যাবার আগে
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
দৃশ্যত 'শূন্য' বলে কিছু নেই।
যা দেখা যায় না, তা দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা।
সেই শূন্যতাকেই আমরা আকাশ বলি।
বুকের ভেতর এমন শতেক আকাশ আমরাও পুষি।
আমি যাকে শূন্য বলি,
আমিহীন যাকে আমি নিঃসঙ্গ ভাবি;
সেটা শূন্য নয়, সে মানুষ আদৌ নিঃসঙ্গ নয়।
দৃশ্যের বাইরেও কিছু দৃশ্য থাকে,
যাকে আমরা অদৃশ্য বলি।
সেই দৃশ্য দেখার, কিংবা দেখে
হজম করার ক্ষমতা মানুষের নেই।
বই : অতটা দূরে নয় আকাশ
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
কে শেখালো সন্ধ্যা রাতে
বেলকনিতে চাঁদ দেখাতে?
কে দেখালো ভরাট লাগে
হাতের ভেতরে হাত রাখাতে।
কে জানালো গভীর রাতে
ঘড়ির কাটার ছন্দ পতন?
কে ভাবালো জীবনটা এক
খরস্রোতা নদীর মতোন!
কে চেনালো শিশির ভেঙে
যুগল পায়ে হাঁটতে যাওয়া?
কে কেনালো খুশির বদল
দুঃখটাকে বিলিয়ে নেওয়া।
কে রাঙালো বিষণ্ণতার রাত্রি শেষে
গোলকধাঁধার সকালটাকে?
কে ভাঙালো কষ্ট পেয়ে লুকিয়ে কাঁদা
অভিমানের দেয়ালটাকে!
কে আঁকালো মনের কোণে
বৃষ্টি শেষে– রোদের ছবি?
কে ডাকালো ছন্নছাড়াই
লাগছে ভালো আমার কবি।
কে বোঝালো; দুঃসময়ে
সাহস রেখো কাঁদতে মানা,
কে সাজালো জীবনটাকে
রূপকথাতে ষোল আনা?
সেই সে মানুষ—
কোথায় এখন কোন সুদূরে,
হারিয়ে যাওয়া প্রথম মানুষ
তার তরে কি হৃদয় পোড়ে?
কবিতা : প্রথম মানুষ
ছবি : মাহমুদুল হাসান নিঝুম
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
বৃষ্টির দিনগুলোতে আমার ঘুম ভাঙ্গে না।
সেইসব ভোরে চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করে না।
বাতাসে বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ মেখে
আলসেমিতে মুড়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
আজও শেষ রাতে বৃষ্টি হলো।
আমি চোখ বুজে বালিশে কান পেতে বৃষ্টির শব্দ শুনলাম।
রাত ভোর করে সকাল হলো।
দিবসের প্রথম আলো এসে পড়লো ঝুল-বারান্দায়।
আমি শুয়েই রইলাম, যেমন ছিলাম তেমন।
নীলা সেই ভোরেই বিছানা ছাড়লো।
ফ্রেস হলো, এঁটো বাসনকোসন মাজলো।
দীর্ঘ সময় নিয়ে নাস্তা বানালো।
তারপর অফিসের সময় হয়ে এলে
আলতো করে মাথায় হাত রেখে ডাকলো;
'নাস্তা করবে চলো, অফিসে দেরি হয়ে যাবে তো'।
আমি কোনো কথা বলি না।
চুপচাপ বন্ধ চোখে শুয়ে থাকি,
যেমন ছিলাম তেমন।
নীলা এবার মাথার কাছটায় বসে।
আলগোছে মাথায় হাত রাখে।
চুল এলোমেলো করে দেয়।
তারপর সেই অগোছালো চুল
ঠিক করে দিতে দিতে ডাকে;
'নাস্তা করবে চলো।
অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো'!
আমি কোনো কথা বলি না।
চুপচাপ শুয়ে থাকি, যেমন ছিলাম তেমন।
তারপর নীলা উঠে চলে যেতে থাকে।
আমি বন্ধ চোখেই তার হাত ধরি।
অসাবধানতায় একটা নীল কাচের চুড়ি ভেঙ্গে যায়।
সে ভেঙ্গে যাওয়া চুড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে
আবার কাছে এসে বসে। আমি তখন দূরত্ব কমিয়ে
কানের কাছটায় মুখ এনে বলি;
'রোজ রোজ ব্রেকফাস্টে—
শক্ত রুটি চিবাতে ভালো লাগে না।
কোনো কোনো দিন ঠোঁটের নরমে ঠোঁট ছোঁক,
কোনো কোনো দিন চুমুর আদরে ব্রেকফাস্ট হোক।'
কবিতা : ব্রেকফাস্ট
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
অভিমান গাঢ় হলে
টান পড়ে কেটে যাওয়া সুতোর মতো
শব্দহীন ছিঁড়ে যায় সম্পর্কের বুনন।
এত দীর্ঘ সময় তো শত্রুর সাথেও
কথা না বলে থাকিনি আগে।
তাহলে কবিতারা!
সে তো শত্রু নয়, আত্মার আপন।
কীভাবে কাটছে তার দিনমান প্রতিটা ক্ষণ!
সেই কবেকার কোনো এক সন্ধ্যার
আবছা আলোয় আমাদের দেখা হয়েছিল।
অন্ধকারে হারিয়ে ফেলা দিকের মতো
পথ ভুলে চলে গেছি দু'জন দু'দিক।
ক্রমশই সরে গেছি হৃদয়ের চৌহদ্দি থেকে দূরে।
কোথাও ঝরা পাতায় পা পড়লে
শুনতে পাই হৃদয় ভাঙার শব্দ।
অথচ তখনো হেমন্ত আসেনি পুবের বাতাসের গায়।
পথ হাঁটলে পথ ফুরায়,
আমরা হাঁটলে ক্রমশই দূরত্বেরা দৈর্ঘ্য পায়।
এত এত শব্দ আওড়াই মুখে,
এত এত মানুষ দেখি চারদিকে;
অথচ কোনো মানুষই আপন হয়ে উঠে না৷
কোনো শব্দেরাই কবিতা হয়ে উঠে না!
আপনি হীন, আপন হীন এই শব্দের ভীড়ে
আমি আর কতকাল–
কবিতার জন্য মিছিল করে যাব?
বই : কবি তার কবিতার
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
ধরো, বছর বিশেক পর
কোন এক গোধুলি বিকেল।
শ্রাবণেই হতে হবে এমন কোন কথা নেই।
শীত কিংবা গ্রীষ্মেও হতে পারে।
তবে মাথার পরে আকাশ থাকবে,
থাকবে উড়ে যাওয়া মেঘদল।
যদি শীত হয় তবে তোমার—
গায়ে থাকবে আসমানী রংয়ের শাল,
আর গ্রীষ্ম হলে পুবের বাতাসে
উড়ে যাবে দীঘল কালো চুল।
ততদিনে নিশ্চয় বুড়িয়ে যাবে তুমি!
চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে আমিও লুকাবো বয়স।
তবুও দেখা হবে আমাদের।
কোন এক গোধূলি বিকেল।
'উপবন এক্সপ্রেস' এসে থেমেছে তোমার শহরে।
আমি প্লাটফর্মে পা রাখতেই দেখলাম—
দাঁড়িয়ে আছো তুমি।
পরের ট্রেনেই শহর ছাড়ার তাড়া।
ততক্ষণে সাইরেন বেজে উঠেছে ট্রেনের।
আমি সে আওয়াজ ছাপিয়ে ঠিক
আজকের মতই যদি বলে উঠি; 'ভালোবাসো'?
তুমি কি সাইরেনের শব্দে 'ভালোবাসি' চাপা পড়েছে
এমন ভাব করে চলে যাবে?
নাকি সাইরেন ছাপিয়ে ছলছল চোখে
আকাশে চোখ রেখে বলে দেবে—
'ভালোবাসি' 'ভালোবাসি'।
কবিতা : উৎসর্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
জীবন কখনো নাটক, গল্প - উপন্যাস কিংবা ছবির মতো হয় না তবে জীবন থেকে অনেক নাটক, গল্প— উপন্যাস কিংবা ছবির সৃষ্টি হয়।
জীবন-ই মূলত নাটক, গল্প -উপন্যাস ছবির আদি অবস্থান অথবা রচিয়তা।
জীবন কখনো নাটক, গল্প - উপন্যাস কিংবা ছবির মতো হয় না তবে জীবন থেকে অনেক নাটক, গল্প— উপন্যাস কিংবা ছবির সৃষ্টি হয়।
জীবন-ই মূলত নাটক, গল্প -উপন্যাস ছবির আদি অবস্থান।